সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ
সচিবালয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বড় জমায়েত
- আপলোড সময় : ২৩-১২-২০২৪ ১১:৩৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-১২-২০২৪ ১১:৩৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্যান্য ক্যাডারের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সচিবালয়ে বড় শোডাউন বা জমায়েত দেখিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের দাবির কথা জানিয়েছেন তারা। সচিব জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সুপারিশ দেয়ার আগে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনের সঙ্গে আবার বসবে কমিশন।
এর আগে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এই কমিশনের প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। কমিশনের সুপারিশের মধ্যে থাকছে জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি; উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা। কমিশনের সুপারিশের বিষয়গুলো সামনে আসার পরই এ ব্যাপারে প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন চায়। অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রাখার সুপারিশের বিপক্ষে। মানে তারা ক্যাডারেই থাকতে চান। এর মধ্যে ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গত শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি সভা করে। সভায় পরিষদের সঙ্গে পরিষদভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের পৃথক সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় হয়। সভা থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা ও কোটামুক্ত উপসচিব পুলের দাবিতে কর্মবিরতিসহ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত শনিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অনেক কর্মকর্তা স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফেসবুকে নানা পোস্ট দিচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা সচিবালয়ে তিন নম্বর ভবনের নিচে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দোতলায় অবস্থিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের দফতরের সামনে যান। কিন্তু বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তারা আশপাশে অবস্থান নেন। পরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তিনতলায় অবস্থিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও কমিশনের সদস্যসচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং নিজেদের দাবিদাওয়া সচিবের কাছে তুলে দেন। পরে সচিব সাংবাদিকদের জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে তারা আবার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসবেন। এ সময় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, এটা কোনো মিছিল নয়, শোভনীয় প্রক্রিয়ায় তারা এখানে এসেছেন। কমিশনের প্রধান যেহেতু নেই, তাই সদস্যসচিব হিসেবে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে কাগজ (দাবিদাওয়া) দিতে এসেছেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেয়া হয়। এই ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডার থেকে আবেদন আহ্বান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুপিরিয়র সিলেকশন কমিটির (এসএসবি) মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০। এর আগে গত বুধবার উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ নিয়ে বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন চায়। একই দিন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা সভাও করেছে। পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসকেরা এই সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসকেরা সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে কার্যবিবরণী পাঠিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কর্মকর্তারা বলেছেন, উচ্চ আদালতের একটি মীমাংসিত বিষয়ে কমিশনপ্রধানের আকস্মিক বক্তব্য সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত। তারা (প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা) বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আলাদা করে আগের মতো শতভাগ উপসচিব বা তার ওপরের পদ অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ